আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানুন
এক সময় আক্কেল দাঁত সবারই উঠে থাকে। মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে কিছু দাঁত পড়ে যায় এবং কিছু দাঁত নতুন ভাবে ওঠে। আর বয়ঃসন্ধি কালের পর মানুষ ধীরে ধীরে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে দাঁতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এবং তারই ধারাবাহিকতায় আক্কেল দাঁত সবারই ওঠে। তবে আক্কেল দাঁত ওঠার সময় প্রচুর পরিমাণে ব্যথা অনুভূত হয়। আর এই ব্যথায় অনেকে ঘাবড়ে গিয়ে থাকেন তবে এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর আজকের আলোচনার প্রধান বিষয় হচ্ছে আক্কেল দাঁতের ব্যথা কিভাবে কমানো যায়।
ধরে নিচ্ছি, আপনার আক্কেল দাঁত ওঠার জন্য দাঁত ব্যথার ভুক্তভোগী হয়েই আপনি এই পোস্টটি পড়তে এসেছেন। তবে যদি আপনি এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়েন সে ক্ষেত্রে আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারব যে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনি আপনার দাঁতের ব্যথাকে কিভাবে কমাবেন বা আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাবেন। তাই অন্যান্য কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক এবং আজকের আলোচ্য বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আলোচ্য বিষয়ঃ
আক্কেল দাঁত বলতে কি বুঝায়
আক্কেল দাঁত এই নামটি শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। তবে অনেকেই আক্কেল দাঁত সম্পর্কে জানেন আবার অনেকেই জানেন না এবং যারা আক্কেল দাঁত সম্পর্কে জানেন না তাদের জন্যই এই পোস্ট। মানুষের মুখ গহবরের শেষের দিকে নিচের চোয়ালে ও উপরের চোয়ালে দুটি করে চারটি দাঁত ওঠে এবং সে দাঁতগুলোকে আক্কেল দাঁত বলা হয়। সাধারণত এই দাঁত মাড়ির শেষের দিকে উঠে থাকে।
আরো পড়ুনঃ দাঁত ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন
সচরাচর দেখা যায় ১৭ বছর বয়স থেকে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত বয়সি মানুষের এই দাঁত উঠে থাকে। কারো সম্পূর্ণভাবে এ দাঁত ওঠে আবার কারো আংশিকভাবে এ দাঁত উঠে থাকে তবে যাদের আংশিকভাবে দাঁত ওঠে বা মাড়ির নিচে এ দাঁত থেকে যায় সেক্ষেত্রে যখন দাঁত বের হয় তখন প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয় এবং সে ব্যথাকে আক্কেল দাঁতের ব্যথা বলা হয়ে থাকে।
আক্কেল দাঁত কেন হয়
সাধারণত একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের 32 টি দাঁত থাকে তবে মানুষ ভেদে এর তারতম্য হতে পারে কারো বা কম কারো বা বেশি। আক্কেল দাঁত একটি অপ্রয়োজনীয় দাঁত। প্রাচীনকালে এ দাঁতের ব্যবহার হতো যেমন মানুষ আগে আগুন আবিষ্কার করতে শিখেনি যার কারণে গুহায় বসবাস করতে হতো এবং খাবার অতিরিক্ত চিবানোর কাজে এ দাঁত ব্যবহার করত। বয়স হওয়ার সাথে সাথে এ দাঁত সকলেরই ওঠে।
আক্কেল দাঁত ওঠার বয়স
আমরা এ তো পূর্বেই জেনেছি আমাদের মুখের নিম্নভাগে বা শেষের দিকে উপরের চোয়াল এবং নিচের চোয়ালে যে চারটি দাঁত ওঠে সেই চারটি দাঁতকে আক্কেল দাঁত বলা হয়। তবে এই আক্কেল দাঁত সবার ই উঠে থাকে। কিন্তু অনেকেই আক্কেল দাঁত ওঠার সঠিক বয়স সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। সাধারণত ১৮ থেকে ২৫ বয়সের মানুষের যে কোন সময় উঠতে পারে তবে ব্যক্তি ক্ষেত্রে এর তারতম্য ও ঘটতে পারে ২৫ বয়সের বেশি বয়সী মানুষদেরও এ দাঁত উঠতে দেখা যায়। তাই ধরে নিচ্ছি আক্কেল দাঁত ওঠার বয়স কত এ ব্যাপারে আপনি স্পষ্ট ধারনা পেয়েছেন।
আক্কেল দাঁত উঠার লক্ষণ
কোন বিষয়গুলো লক্ষ্য করার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার আক্কেল দাঁত উঠতেছে।আক্কেল দাঁত ওঠার বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে যে লক্ষণগুলোকে আপনি পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন আপনার আক্কেল দাঁত উঠতেছে কিনা ? তো চলুন সেই লক্ষণ গুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। আক্কেল দাঁত ওঠার সময় মাড়ির চারিদিকে সেই অংশটি ঢাকা থাকে এবং সেটিকে অপারকুলাম বলা হয়। কিন্তু এই অপারকুলাম কে ভেদ করে আক্কেল দাঁত উঠতে পারে না যার কারণে প্রচুর ব্যথা অনুভূত হয় এবং মারি ফুলে যেতে পারে ও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য উপকারিতা
এবং অতিরিক্ত দাঁত ব্যথার কারণে বা নারী ব্যথা হওয়ার কারণে গায়ে প্রচুর পরিমাণে জ্বর আসতে পারে এবং মাথাব্যথা হতে পারে। আপনি যদি এই লক্ষণগুলো আপনার শরীরে পরিলক্ষিত করতে পারেন তাহলে বুঝে নিবেন যে আপনার আক্কেল দাঁত উঠতেছে বা আক্কেল দাঁত ওঠার সময় হয়ে এসেছে।
আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন থাকে
আক্কেল দাঁতের ব্যথা শুনলে আমাদের ভিতরে অনেক ভয়ের কাজ করে কেননা এ ব্যথা প্রচন্ড আকার ধারণ করতে পারে। তবে আক্কেল দাঁতের ব্যথা কতদিন থাকে এবং এই ব্যাথা কত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় সে বিষয় সম্পর্কে যদি আপনার না জানেন তাহলে চলুন জেনে নিন আক্কেল দাঁতের ব্যথা কতদিন থাকে । সাধারণত আক্কেল দাঁতের ব্যথা দুই দিনের বেশি সময় দীর্ঘস্থায়ী হয় না আর যখন ব্যথা শুরু হয় তখন সাত থেকে দশ মিনিট ব্যাথা হতে পারে। তবে আক্কেল দাঁতের ব্যথা লাগাতার হয় না দু তিন দিন পর পর অনুভূত হয়। আপনার ক্ষেত্রে যদি এর ব্যতিক্রম হয় বা অতিরিক্ত ব্যথা করে সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায়
আক্কেল দাঁত ব্যথা হলে আমরা সবাই এই ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। কিন্তু আক্কেল দাঁত ব্যথা হলে বা এ ব্যথা কমানোর জন্য ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে যে উপায়গুলোকে আপনি কাজে লাগাতে পারেন আপনার আক্কেল দাঁতের ব্যথা কমানোর মহা থেরাপি হিসাবে। প্রথমে যে পদক্ষেপটি গ্রহণ করবেন সেটি হল লবণ জল। জলের সাথে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করবেন। এবং অতিরিক্ত ব্যাথা হলে লবঙ্গ এর ব্যবহার করতে পারেন কেননা দাঁতের ব্যথায় লবঙ্গ খুবই কার্যকরী একটি ঔষধি গুনসম্পন্ন মসলা।
এছাড়া গরম ও ঠান্ডা পানি দিয়ে দাঁতে শেক দিবেন এবং হলুদ মিশ্রিত জল ব্যবহার করবেন এবং কুলি কুচি করবেন। আশা করছি আপনি এই পদক্ষেপগুলো সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারেন বা কাজে লাগাতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনি আক্কেল দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয়
আক্কেল দাঁতের ব্যথা প্রচুর পরিমাণে হয়ে থাকে তাই অনেকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে সেই আক্কেল দাঁতকে তুলে ফেলার চেষ্টা করেন। তবে অনেকেই এ ক্ষেত্রে অনেক মিথ্যা গল্প বলে থাকে যে আক্কেল দাঁত তোলার সাথে সাথে মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে যায় কিংবা চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে বা চোখ দিয়ে ঝাপসা দেখতে পারেন এ ধরনের কথা। তবে শুরুতেই আমি বলে নিচ্ছি আক্কেল দাঁতের সাথে আমাদের এ সকল বিষয়ের কোন সংযোগ নেই। আক্কেল দাঁত সম্পূর্ণ একটি অপ্রয়োজনীয় দাঁত। এ দাঁত আমাদের কোন কাজে লাগে না তবে প্রাচীনকালে মানুষের সামনের দাঁত গুলো আগেই পড়ে যেত এবং অতিরিক্ত খাবার চিবানোর জন্য যার কারণে তারা আক্কেল দাঁত ব্যবহার করত।
আরো পড়ুনঃ ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন এর জন্য কি প্রয়োজন
কেননা সে যুগে আগুন আবিষ্কৃত হয়েছিল না যার কারণে সিদ্ধহীন খাবার খেত। তবে বর্তমানে আক্কেল দাঁত সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় একটি দাঁত। তবে আক্কেল দাঁত যদি আপনার কোন রকম সমস্যা না করে তবে এটি না তোলায় উত্তম। আশা করছি আপনি আক্কেল দাঁত সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে অবগত হয়ে খুশি হয়েছেন তাই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।