অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ কি জানুন
ত্বকের একটি বিশেষ অংশ হচ্ছে চুল। অল্প বয়সে চুল পাকর কারণে অনেকেই অনেক ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করে আসছেন। তারপর ও কোন কাঙ্খিত ফলাফল পাচ্ছেন না। তারপর ও আবার যদি অল্প বয়সে চুল পেকে যায় সেটা হল আরও বিব্রতকর ব্যাপার।
তাই আপনি যদি এই পুরো পোস্টে মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ কি এ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়া চুল কিভাবে মজবুত করবেন এবং কোন পদক্ষেপ গুলো অবলম্বন করার ফলে আপনি অল্প বয়সে চুল পাকা হতে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন সে সকল বিষয় নিয়েই থাকছে আজকের আলোচনা। তাই দয়া করে সম্পূর্ণ পোস্টটি স্কিপ না করে মনোযোগ সহকারে পড়ুন তাহলে অল্প বয়সে চুল পাকা সংক্রান্ত সকল বিষয়ে অবগত হতে পারবেন।
আলোচ্য বিষয়ঃ
নতুন চুল গজানোর ওষুধ
হাড়ের ক্ষয় রোধে একটি ওষুধ পরীক্ষার সময় গবেষকরা দেখতে পান যে এটা চুলের বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এক নতুন চিকিৎসা নিয়ে টাক মাথায় চুল গজানোর বিষয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা বলেছেন, মাথায় চুল পড়া ঠেকানোর এক নতুন চিকিৎসা উঠতে পারে এমন একটি ওষুধ যা হাড়ের ক্ষয় রোধে ব্যবহার হয়।
গবেষকরা বলেছেন, সাইক্লোস্কোরিন ওষুধ অস্টি ও পড়শীষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধটি কে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার সময় দেখা গেছে নাটকীয় ভাবে চুলের গোড়ার উপর প্রভাব ফেলে এবং তাকে বাড়তে সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃ দাঁত ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন
চুল পড়ার চিকিৎসা হিসেবে এখন মাত্র দুইটি ওষুধ প্রচলিত আছে। মিনোক্সিডিল ও ফিন্যাস্টেরাইড- মিনোক্সোডিল পুরুষ ও মহিলা উভয়ই ব্যবহার করতে পারে। ফিন্যাস্টেরাইড যা শুধু পুরুষ ব্যবহার করতে পারে ঔষধ দুটির বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে তবে সবার ক্ষেত্রে একই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না এবং সবার ক্ষেত্রে কার্যকরও হয় না। তাই টাক সমস্যাই ভুক্তভুগিরা চুল প্রতি স্থাপনের পন্থা বেঁছে নেন।
গবেষকগণ বলেন, চুল পড়ার আবশ্যক কোন চিকিৎসা নেই আবার থাকলেও সবার জন্য প্রযোজ্য নই।
অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধের উপায়
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য অনেকেই কিছুনা কিছু ব্যবহার করছেন এবং অনেক পরামর্শ শুনে কাজ করছেন তারপরও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। একবার যদি চুল পড়া শুরু করে সহজে আর থামেনা। চুল পড়ার কারণে চুল পাতলা হয়ে যায় এবং শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে এই চুল পড়া। চুল পড়া বন্ধের লক্ষ্যে বাজার থেকে আনা কেমিক্যাল যুক্ত পন্যের পরিবর্তে ঘরোয়া উপায় চুল পড়া বন্ধ করতে পারেন। যেমন: মেথি, নিম পাতা, পেঁয়াজের রস, নারিকেল দুধ ব্যবহার করে।
মেথিঃ
চুল পড়া বন্ধে মেথি হল একটি অন্যতম উপাদান। দ্রুত চুল লম্বা করতেও সাহায্য করে মেথি। মেথির ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন থাকে মেথিতে যা ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকের রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। এছাড়াও মেথিতে ভিটামিন সি, আয়রন ও পটাশিয়াম বিদ্যমান। এসব উপাদান চুল পড়া রোধে কাজ করে।
নিম পাতাঃ
নিমপাতার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই সবাই করে আসছে। নিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকাই মাথার ত্বকের জন্য কার্যকরী। আর চুলের বৃদ্ধি নির্ভর করে মাথার ত্বকের উপর। চুল পড়া রোধ করার সাথে সাথে নারিকেল তেলের সাথে নিম পাতার রস চুলে ব্যবহারে চুল দ্রুত লম্বা হতে থাকে। ১২ থেকে ১৪ টি নিম পাতার রস ও নারিকেল তেল মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে মাথার ত্বকে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করেবে। এছাড়াও অলিভওয়েল বা আমলকির তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং আপনি পাবেন ঘন ও লম্বা চুল।
পেয়াজের রসঃ
পেয়াজের রস চুল বৃদ্ধিতে একটি অন্যতম সহায়ক। পেয়াজে সালফার বিদ্যমান, যা চুলের গোড়া শক্ত করতে সাহায্য করে। পেয়াজের রস তেলের সাথে বা অন্যান্য ভেষজের সাথে (কারিপাতা ও জবার নির্যাস) মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুলের ত্বকের উন্নতি হয়, চুল গজায় ও চুল পড়া কমে।
মাথায় মাখার পর ২০ থেকে ২৫ মিনিট রাখার পর ধুলে ফেললে চুলের ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
নারিকেল দুধঃ
নারিকেল তেলের সাথে সাথে নারিকেল দুধও অনেক উপকারী। নারিকেল দুধে ক্ষতিকর রাসায়নিক না থাকায় নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও নারিকেল দুধ ব্যবহারে চুল পড়া রোধ করে দ্রুত চুল গজাতে সাহায্য করে। অন্যান্য ভেষজ যেভাবে যে নিয়মে ব্যবহার করেন ঠিক সে ভাবেই এটি ব্যবহার করা যাবে। আপনি সপ্তাহে একবার বা দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুল পড়া রোধ ও মজবুত করতে স্বয়ংক্রিয় ভূমিকা রাখে।
আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক উপায়ে রূপচর্চা যেভাবে করবেন
অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ
সকলেরই বৃদ্ধ বয়সে চুল পাকে। কিন্তু অনেক সময় অল্প বয়সে চুল পাকে। সে ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই ঘাবড়ে গিয়ে থাকি বা অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ কি এ বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নাই বলে আমরা এদিকে নেতিবাচক হিসাবে দেখে থাকি। আর অল্প বয়সে চুল পাকার ফলে মানুষ লজ্জা হীনতায় ভোগে এবং নিজেকে আড়াল রাখতে চায়। তাই আপনি অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ সম্পর্কে জানলে মানুষকে এর জবাব দিতে পারবেন।
অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ সমূহঃ
- অল্প বয়সে চুল পাকার অন্যতম কারণ হল বংশগত কারণ। বংশের মধ্যে রক্ত সম্পর্ক কারও অল্প বয়সে চুল পাকার ইতিহাস থাকলে অল্প বয়সে চুল পাকতে পারে।
- হরমজনিত সমস্যা থাকলে অল্প বয়সে চুল পাকতে পারে। হাইপারথাইরয়েডিজম এবং হাইপোথাইরয়েডিজম এই দুইটি সমস্যা থাকলে অল্প বয়সেই চুল পাকতে পাড়ে। হাইপারথাইরয়েডিজম এবং হাইপোথাইরয়েডিজম হওয়ার কারণ হল রক্তে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কম ও বেশি হওয়ায়। বেশি হলে হাইপারথাইরয়েডিজম ও কম হলে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে।
- মানসিক অশান্তি, টেনশন ও দুঃখ কষ্ট হতে অল্প বয়সে চুল পাকতে পারে। সেরেটনিন হরমোন অনেক বড় ভূমিকা পালন করে তারুণ ধরে রাখার ক্ষেত্রে। মানসিক অশান্তি, টেনশন ও দুঃখ কষ্ট পারে। সেরেটনিন হরমোন হ্রাস পায়। ফলে চুলের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
- পরিবেশ দূষন ও বিশুদ্ধ খাবারের অভাবেও অল্প বয়সে চুল পাকতে পারে।
- অতিমাত্রায় প্রোটিনযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় অতিরিক্ত খাবার ফলে অল্প বয়সে চুল পাকতে পারে। অনেক ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে চুল পেকে যেতে পারে।
- বয়সের তুলনায় ওজন অনেক বেশি হলে অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে।
পাকা চুল রোধ করার জন্য করণীয়
- নিয়মিত ফলমূল, সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। তারুণ ধরে রাখতে সহায়ত করে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সবুজ শাক সবজি ও হলুদ ফলে উচ্চমাত্রায় বিদ্যমান।
- সর্বদা ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করতে হবে। মানসিক চাপ যাতে বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সবসময় হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে।
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
- বয়স অনুযায়ী ওজন ঠিক রাখতে হবে। শরীরে কোলেস্টেরল বা চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- নেশা জাতীয় দ্রব্য, জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড অতিরিক্ত কোমল পানীয় বর্জন করতে হবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে যার ফলে রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।
- গোসল করার সময় অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না।
- নিয়মিত চুলের পরিচর্যা করা লাগবে অর্থাৎ আচড়াতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রূপচর্চা বা চুলের কোন ঔষধ খাওয়া যাবে না।
আরো পড়ুনঃ সাত দিনে মোটা হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানুন
চুল পড়া বন্ধ করতে কোন ভিটামিন খেতে হব
চুলের যত্বে আমরা কতই কিছুনা করে থাকি কিন্তু চুলের যত্নে যে ডায়েটের অনুকে গুরুত্ব রয়েছে তা আমাদের অনেকেরই অজানা। যতই ভালো মানের প্রসাধনী চুলে ব্যবহার করেন না কেন শরীরে পুষ্টি না থাকলে কোন কাজই হবে না। চুলের গুণাগুণ বজায় রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই ভিটামিন যুক্ত খাবার আপনার তালিকায় রাখতে হবে। গবেষকরা এমনই কিছু ভিটামিনের কথা বলেছেন।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সঃ
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে চুলের উজ্জলতা বাড়াতে। গবেষকদের মতে, ভিটামিনের ঘাটতি না থাকলে চুলের উজ্জলতা বাড়বে সাথে সাথে অন্যান্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সবুজ শাক-সবজি, ডাল, শস্য, মাংসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বিদ্যমান। এজন্য এসব খাবার আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখার চেষ্টা করুন।
বায়োটিনঃ
চুল পড়া রোধ ও চুলের গোড়া মজবুত করতে বায়োটিন অন্যতম ভূমিকা রাখে। ডিম, আমন্ড, বাদাম ও সয়াবিনে প্রচুর পরিমাণে বায়োটিন বিদ্যমান। এ খাবার গুলো আপনার নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন।
ভিটামিন এ, ই ও সিঃ
মাথার ত্বক সূস্থ রাখতে ভিটামিন এর গুরুত্ব অপরীসিম। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন: গাজর, পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বিদ্যমান। মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালনের ভিটামিন ই এর কোন বিকল্প নেই। চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ভিটামিন সি । এছাড়াও অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি সাইট্রাস ফল এবং সবজিতে পাওয়া যায়।