পেটের মেদ কমানোর উপায় সম্পর্কে জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি মেদ ভুঁড়ি নিয়ে চিন্তিত ? বা অনেক ক্ষেত্রে মেদ ভুড়ির কারণে লজ্জার সাম্মুখীন হতে হয়। তাই পেটের ভুঁড়ি কমানোর জন্য হয়তো আপনি শারীরিক ব্যায়াম করে থাকেন বা এ ব্যাপারে অনেক টেনশনে রয়েছেন। কিন্তু কিভাবে পেটের ভুড়ি কমানো যায় এবারে কমাতে হয় এ ব্যাপারে যদি আপনার স্পষ্ট ধারণা না থাকে সেক্ষেত্রে আপনার জন্যই মূলত আজকের এই আলোচনা। পেটের ভুড়ি কমানো বা মেদ কমানোর উপায় সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে সহজেই আপনার পেটের ভুড়ি কমাতে পারবেন।

তাই কোন উপায় বা পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার মাধ্যমে আপনি অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আপনার মেদ বা ভুড়ি কমাতে পারবেন এই বিষয়ে সম্পর্কে জানেন এবং পেটের ভুরি কমানোর পর যে সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে সে বিষয় সম্পর্কেও জানবো নয়তো পেটের ভুরি কমানোর পর আবার যদি নিয়ম কানুন মেনে না চলেন সেই ক্ষেত্রে আপনার শরীরের চর্বির মাত্রা বেড়ে যাবে এবং পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে তাই পেটের ভুঁড়ি কমানোর উপায় জানার পর আমাদের কোন উপায় গুলো মেনে চলতে হবে সে বিষয়েও জেনে নেব।

আলোচ্য বিষয়ঃ 

পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে যে সকল শাকসবজি

অনেকেই অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন শুধুমাত্র পেটের মেদ কমাতে। শারিরীক ব্যায়াম ও সুষম জাতীয় খাবার খেলে পেটের চর্বি কমে। সেটার পাশাপাশি শাক-সবজিও পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। আসুন জেনে নিই কি কি শাক-সবজি মেদ কমাতে সহায়ক।

লাউঃ 

লাউয়ে পানির পরিমাণ বেশি ও ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় লাউ পেটের মেদ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আন্তর্জাতিক গবেষনায় দেখা গেছে লাউয়ে উচ্চমাত্রায় পানি ও আশ জাতীয় পদার্থ বিদ্যমান যা ক্যালনি গ্রহনের মাত্রা কমিয়ে দ্রুত পেট ভরিয়ে ফেলতে সহায়তা করে। আর লাউ যেকোন তরকারি দিয়ে রান্না করেও খাওয়া যায়।

ফুলকপিঃ 

ফুলকপি এমন একটি সবজি যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। লাউয়ের ন্যায় ফুল কপিতেও আশ বেশি ও ক্যালরি কম। সেজন্য ফুলকপিও দ্রুত পেট ভরাতে সাহায্য করে। ইনডোলের মত কয়েকটি যৌগ ফুলকপিতে বিদ্যমান যা হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে পেটের চর্বি কমাতে সহায়তা করে। ফুলকপিও অন্যান্য সবজির সাথে অনায়াসে খাওয়া যায়।

পালং শাকঃ 

অনেক রকম পুষ্টিতে ভরপুর হল পালং শাক। পালংশাক নিয়মিত খেতে পারলে পেটের চর্বি সহজেই কমতে থাকবে। পালং শাকেও ক্যালরি কম থাকে ও আশের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই পেট অনেক সময় ধরে ভরা থাকে। একজন গবেষকের গবেষনা অনুযায়ী পালং শাকে এমন একটি উপাদান আছে যা খাওয়ার ইচ্ছা বা ক্ষুধা অনেকাংশই কমিয়ে দেয়। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে পালংশাক যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

গাজরঃ 

গাজরেও আশের পরিমান বেশি ও ক্যালরির পরিমাণ কম। চোখের জন্যই শুধু ভালো নই গাজর পেটের মেদ কমাতেও সাহায্য করে। গবেষকের গবেষনা অনুযায়ী গাজরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান বিদ্যমান। গাজর খেলে পেট ভরে পাশাপাশি ক্যালরিও কম গ্রহন করে।

শসাঃ 

শসা হল একটি আদর্শ খাবার । শসা খেলে শরীরে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যা ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণে প্রত্যক্ষভাবে সহায়ক। শসাতে ক্যালরি অনেক কম ও শসা অনেক দুষিত উপাদান বের করতে সহায়তা করে। অনেকেই ওজন কমাতে শসা রান্না ছাড়াই সালাদের সাথে বা টুকরো করে খেয়ে থাকে।

পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া কিছু উপায়

পেটের মেদ কমানো কঠিন কিছু কাজের মধ্যে এটি একটি কঠিন কাজ। কেননা অনেক কস্ট করে ডায়েট করেও পেটের মেদ কমানো যায় না। পেটের মেদের কারনে ছেলেদের ও মেয়েদের উভয়েরই সৌন্দর্যের ব্যাঘাত ঘটে। তাই আজ ঘরোয়া কিছু উপায় জেনে নিই।

জিরা পানিঃ 

সকালে খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার অভ্যাস করলে পেটের মেদ সহজেই কমে যাবে। জিরা পানি হজমের সহায়তার পাশাপাশি পেটের মেদ কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত জিরা পানি খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

লেবু পানিঃ 

সকাল সকাল লেবু পানি খেলে সতেজ ও ফ্রেস লাগার সাথে সাথে পেটের চর্বি কমাতেও সহায়ক। প্রচলিত উপায়ে গরম পানি ও লেবু মিশিয়ে খেলে দ্রুত পেটের মেদ ঝরে যাবে। গরম পানি ও লেবু মিশিয়ে খেতে ভালো না লাগলে সাথে মধু মিশিয়েও খাওয়া যায়। আবার সরাসারি লেবুর রস বের করেও খাওয়া যায়।

হলুদের গুড়াঃ 

হলুদের গুড়া আমরা সবাই তরকারির সাথে খেয়ে থাকি। আর এই হলুদের গুড়া ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখার সাথে সাথে ওজন কমাতেও সহায়ক। ১ চা চামচ গুড়া হলুদ এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

সকালে প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়াঃ 

সকালে বেশি বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে যেমন শক্তি যোগাতে সাহায্য করে তেমনি শরীরের চর্বি কমাতেও সহায়ক। আপনার প্রতিদিনের নাস্তার তালিকায় প্রোটিনযুক্ত খাবারগুলো রাখুন।

পানিঃ 

মানবদেহে পানির গুরুত্ব অপরীসিম। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেলে শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে, খাওয়ার পূর্বে পানি পান করলে খাবার ও কম খাওয়া যায় বা কম খেয়ে ক্ষুধা নিবারন করা যায়। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা যায় বিশেষ করে কিডনী, প্রসাব ইনফেকশন ইত্যাদি।

ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়ামঃ 

বাসায় অবসর সময়ে ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করতে পারেন। বেশ কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম আছে যেগুলো করে আপনি পেটের মেদ নিয়ন্ত্রণের রাখতে পারেন। আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করলে অতি দ্রুত পেটের মেদ ঝরে যাবে এবং আপনার শরীরে সারাদিন এনার্জিবোধ অনুভব করবেন।

আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক উপায়ে রূপচর্চা যেভাবে করবেন

সকালের যে অভ্যাসগুলো দূর করবে পেটের মেদ

পেটের মেদ জমার পিছনে বেশকিছু কারন আছে। যেগুলো আমরা সচরাচর খেয়াল করি না। যেমন: ঠিকমত ব্যায়াম না করা, খাদ্যাভাসে নিয়ন্ত্রণ না থাকা, রাতে খেয়েই শুয়ে পড়া, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, মদ পান করা এবং বংশগত কারনও হতে পারে। তবে পেটের চর্বি কমানোর জন্য নিম্নোক্ত অভ্যাসগুলো প্রতিদিন সকালে করুন।

একগ্লাস পানি সাথে সকাল হোক শুরুঃ 

পেটের মেদ কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিদিন সকালে খালিপেটে এক গ্লাস পানি পান করুন। সকালে নিয়মিত ১ গ্লাস পানি পান করলে সারাদিন আপনার শরীর এনার্জেটিক থাকবে। হালকা গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন আবার চিয়াসিড ভিজিয়েও পানি খেতে পারেন। যে উপায়ে পানি পান করুন না কেন প্রতিদিন সকালে পানি পান করলে আপনার পেটের মেদ কমতে শুরু করবে।

মেডিটেশনঃ 

মেডিটেশনের জন্য সকালে দশ মিনিট হাতে রাখুন। মেডিটেশন করলে আপনার দুশ্চিন্তা দূর হবে। দুশ্চিন্তা করলে পেটের মেদ বৃদ্ধি হয়। তাই দুশ্চিন্তামুক্ত দিনের শুরু করুন মেডিটেশনের মাধ্যমে। দুশ্চিন্তা কমায় ও হরমোনের ব্যালেন্স করতে সহায়তা করে মেডিটেশন।

ব্যায়ামঃ 

পেটের মেদ ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। আর ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময় হল সকালবেলা। প্রতিদিন সকালে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। যেমন: হাটাহাটি, পুশআপ, ফ্রি হ্যান্ড ওয়ার্ক আউট। দ্রুত ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে ব্যায়াম। নিয়মিত সকালে ব্যায়াম করলে দ্রুত পেটের মেদ ঝরে যাবে।

খাবারের পরিকল্পনাঃ 

আজ সারাদিন কি খাবেন তার পরিকল্পনা সকালেই করে ফেলুন। আপনার সারাদিনের খাবারের পরিকল্পনা থাকলে ফাস্ট ফুড বা অস্বাস্থকর খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারবেন। যার ফলে আপনি শারিরীকভাবেও সুস্থ থাকবেন।

প্রোটিনযুক্ত খাবারঃ 

প্রতিদিন সকালে খাবারের রুটিনে প্রোটিনযুক্ত খাবার খান। প্রোটিনযুক্ত খাবার একদিকে আপনার শক্তি বাড়াবে অন্যদিকে ওজন কমাতেও সাহায্য করবে। প্রোটিনযুক্ত খাবারে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে ও দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে। ফলে বার বার খাওয়ার ইচ্ছাও হবে না এবং ক্ষুধা কম লাগবে। ডিম, দই সকালের নাস্তায় নিয়মিত রাখতে পারেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url