উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাওয়া যায়

সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে আমাদের উদ্যোক্তা হতে হবে। নতুন নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে নিজের আর্থ ও সামাজিক মান উন্নয়নের দার উন্মুক্ত করতে হবে। অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও পূঁজির অভাবে আমরা পিছপা হই। উদ্যোক্তা মনোভাবা যারা আছেন, সকলের উদ্যেশ্যে আজকের আমাদের এই লেখা।

আশা করি সবাই এটি পড়ে উপকৃত হবেন। আজ আমরা আলোচনা করবো কিভাবে আপনি নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে সফল করবেন তার মূল চাবিকাঠি অর্থাৎ উদ্যোক্তা লোন নিয়ে। তাহলে আর হতাশা নয়, চলুন জেনে নিই কিবাবে উদ্যোক্তা লোন পাওয়া যায়।

আলোচ্য বিষয়ঃ 

উদ্যোক্তা ঋণের খাতসমূহ

আসুন জেনে নিই কি কি উদ্যোগ বা খাতে আপনি ঋণ সুবিধা পাবেন।
১. উৎপাদনশীল খাত (এই খাতের আওতায় পড়ে) :
ক) মৎস্য চাষ (কর্প জাতীয় মাছ, তেলাপিয়া, চিতল, কৈ মাছ, গজার, শৈল মাছ পুঠি মাছ ইত্যাদি)।
খ) ক্যাট ফিস বা পাঙ্গাস মাছ, মাগুর, চিংড়ি, পাবদা, সিং, ট্যাংড়া, বোয়াল, মিশ্র মাছ চাষ ইত্যাদি ও পোনা মাছ।

২. প্রাণিসম্পদ খাত (এর আওতায় পড়ে) :
ক) পোল্ট্রি খাত (মুরগী খামার, কোয়েল পাখির খামার, টারকি মুরগি খামার, হাঁসের খামার, রাজা হাঁসের খামার, কবুতর, তিতির পাখির খামার ইত্যাদি।
খ) গবাদিপশুর মোটা তাজাকরণ খাত (গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল মোটাতাজাকরণ, ভেড়া/মহিষ ইত্যাদি মোটাতাজাকরণ।
গ) দুগ্ধ খামার খাত (গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ এর দুগ্ধ খামার)

৩. শিল্প কারখানা খাত:
মৎস্য/পোল্ট্রি হ্যাচারী, কৃষি যন্ত্রপাতি, প্রাণি খাবার তৈরি ফ্যাক্টরি, মাছের খাবার তৈরি ফ্যাক্টরি, রাইস মিল, চাল কল, অয়েল মিল, স’মিল, সার প্রস্তুতকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, আটা/ময়দা/সুজি প্রস্তুতকারক ফ্যাক্টরি, ডিজাইন ও ফ্যাশন ওয়্যার, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, গুড়া মসলা তৈরি ফ্যাক্টরি, চাল ঋৎপাদন, ডাল প্রক্রিয়াজাতকরণ, বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ, রাবার প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়া বাণিজ্য ইত্যাদি।

৪. ক্ষদ্র ও কুঠির শিল্প খাত :
কামারের কাজ, ব্লক-বাটিক/প্রিন্টিং, স্যানিটারী, তাঁত শিল্প, কাঠের/স্টিলের আসবাবপত্র, রেশম, কৃষি যন্ত্রপাতি, আগরবাতি/গোলাপজল/কয়েল তৈরি, বাঁশের শিল্প, প্রিন্টিং ও সাইনবোর্ড প্রতিষ্ঠান, বরফ কল ইত্যাদি।
৫. নার্সারী খাত
৬. কৃষিজ উৎপন্ন খাত

উদ্যোক্তাগণ উক্ত খাতে আবেদনের মাধ্যমে ও প্রয়োজনিয় ডকুমেন্টস বলে ক্ষুদ্র ঋণ সুবিধা পাবেন।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট

১. হলফনামা (স্ট্যাম্প)
২. জামানতনামা (স্ট্যাম্প)
৩. ঋণ গ্রহণ পত্র
৪. বন্ধকীকরণ চুক্তিনামা
৫. সত্ত্বাধিকার দলিল গচ্ছিত রাখার স্মারক
৬. চাহিদা প্রতিজ্ঞাপত্র ও প্রতিশ্রুতি পত্র
৭. কিস্তি পত্র
৮. ক্ষমতা প্রদান পত্র
৯. সম্মতি পত্র
১০. ঋণ সংক্রান্ত পত্র
১১. ঋণ অনুমোদনের শর্তাবলি
১২. নাদাবী পত্র
১৩. মর্টগেজ ডিট/ বন্ধকী দলিল
১৪. আমমোক্তারনামা
১৫. ট্রেড লাইসেন্স
১৬. টাইটেল ডিট (যদি থাকে)

আরো পড়ুনঃ  দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা গুলো কি জানুন

উদ্যোক্তা ঋণ কিভাবে পাবেন

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণদান প্রতিষ্ঠানের কিছু শর্ত থাকে অথবা বলতে পারেন ঋণ দিতে তারা কি ধরনের ঋণী সদস্য নির্বাচন করে থাকে। চলুন যেনে নিই।

ক) ঋণ গ্রহিতাকে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে বসবাসরত বা পরিচালিত উদ্যোক্তার আওতায় থাকতে হবে।
খ) যে উদ্যোগের বলে ঋণ নিবেন তা নিজের দারা অথবা পরিবারের কোন বেতনভোগী শ্রমিক/সদস্যের দারা পরিচালিত হতে হবে।
গ) উদ্যোক্তার প্রকল্পটি উৎপাদনমুখী এবং লাভজনক হতে হবে।
ঘ) নিজ এলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
ঙ) উৎপাদনমুখী ব্যবসা ছাড়াও যদি জনগনের স্বার্থ এমন কোন উদ্যোগ যেমন, ঔষদের ব্যাবসা, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি বিষয়েও সীমিত লোন কর্মসূচির আওতাভূক্ত করা হবে।
চ) উদ্যোক্তাগণ পুরুষ কিংবা নারি উভয়ই হতে পারেন। ঋণগ্রহীতাগণের বয়স সীমা ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর।
ছ) কেন্দ্রের আওতার বাইরে উদ্যোক্তা ও কেন্দ্রভূক্ত ঋণ গ্রহীতার পরিবারের কর্মক্ষম সদস্য ছেলে/মেয়ে/স্বামী/স্ত্রী এদের ঋণ দেয়া যাবে।
জ) উপজেলা কর্মকর্তাগণ উদ্যোক্তা নির্বাচন করবেন প্রয়োজিয় তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে।

ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন

চাকুরিজীবীদের পাশাপাপাশি ইসলামী ব্যাংক ছোট বা মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকেন। ব্যবসা বৃদ্ধি ও নতুন উদ্যোক্তা উদভাবনের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা ঋণ প্রকল্প নিয়ে কাজ করে থাকে। ঋদ্যোক্তা ঋণ নিতে গেলে আপনার কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন তা নিন্মরূপ-

১. এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট
২. ইনকাম সোর্স ডকুমেন্ট
৩. উদ্যোক্তার আপডেট তোলা ছবির কপি
৪. ট্রেড লাইসেন্স এর কপি
৫. পরিকল্পনামাফিক ব্যবসার সম্ভাব্য অর্থের পরিমাণ।
উপরে উল্লেখিত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ সাপেক্ষে সহজেই ইসলামী ব্যাংক কর্তৃক উদ্যোক্তাগণ লোন পেতে পারেন। আশা করি সবাই বুঝতে পারলেন ইসলামী ব্যাংক কর্তৃক চাওয়া ডকুমেন্টগুলো বিষয়ে।

আরো পড়ুনঃ  চুল পড়া বন্ধ করার উপায় জেনে নিন

নারী উদ্যোক্তা লোন

পুরুষের পাশাপাশি নারিদের সাবলম্বি ও অর্থনৈতক উন্নতি সাধনে লোন সুবিধা দিয়ে থাকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অবদান বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্য ও শিল্প খাতে নারীর অংশগ্রণে কাজ করে আসছে। নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রে ৫% সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্মল এন্টারপ্রাইজ ক্ষাতে পূণঃ অর্থায়ন স্কিমের আওতায় দেওয়া হয় এই ঋণ। এসএমই ঋণের ১৫ শতাংশই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন

বাংলাদেশের যুব ও তরুণ সমাজকে উদ্যোগি করতে মূলত প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন স্কিম চালু করা হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ মূলত এই স্কিমের মূল লক্ষ। এই স্কিমের ফলে যুবক ও তরুণরা তাদের মেধার বিকাশে নতুন উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে। প্রধানমন্ত্রী লোন বাংলাদেশ এর আওতায় যুবক ও তরুণরা এককালিন সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণ সুবিধা পেতে পারে, সেটি নির্ভর করতে ব্যবসার ধরনের উপর। এই লোনের সুদের হার শতকরা ৯% সুদ যা খুব সহক ও কার্যকরি একটি মাধ্যম। এটি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের ভিত্তিতে নয় বরং যে কোন খাতে এই ঋণ ব্যবহার উপযুক্ত। যোগ্যতা হিসাবে শুধুমাত্র আপনাকে একটি প্রতিষ্ঠান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকা লাগবে এবং আপনার নিজের দারা পরিচালিত হতে হবে সেই প্রতিষ্ঠান।

প্রধানমন্ত্রী লোন বাংলাদেশ প্রাপ্তির কিছু যোগ্যতা রয়েছে নিম্নে তা বর্ণণা করা হলো-

১. আপনাকে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
২. স্থায়ী বাসিন্দারা স্থানীয় শাখা হতে লোন পাবেন।
৩. আপনি যে উদ্যোগের বলে লোন আবেদন করবেন সে বিষয়ের উপর আপনাকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত হতে হবে, অন্যথায় লোন পাবেন না এবং আপনাকে বেকার হতে হবে।
৪. আবেদনকারি ১৮-৩৪ বছর বয়স হতে হবে।
৫. প্রতিষ্ঠান পরিচালনার যোগ্যতা থাকা লাগবে।
৬. আপনার যদি অন্য ব্যাংকে লোন থাকে এবং সেটি পরিশোধে আপনার অপারগতা থাকলে অথবা লোন খেলাপির মত কোন বিষয় ঘটিয়ে থাকলে এই লোন সুবিধা আপনি পাবেন না।
৭. একজন স্থানীয় গ্যারান্টার লাগবে (গ্যারান্টারের জমি জমা থাকতে হবে)।

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো ঠিক রেখে আপনাকে লোনে আবেদন করতে হবে। তাহলে খুব সহজেই পেয়ে যাবে এই লোন। এবার আসুন জেনে নিই-


প্রধানমন্ত্রী লোন বাংলাদেশের আবেদনের কৌশলসমূহ :

১. লোনের জন্য আপনাকে প্রধানমন্ত্রী লোন বাংলাদেশ পোর্টালে যেয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
২. স্বাক্ষরিত ডিপি এবং ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা স্বাক্ষর দিতে হবে।
৩. আপনার মর্গেজকৃত জমি বা সম্পত্তির অরিজিনাল দলিল এবং সাথে গ্যারান্টারের ও সম্পত্তির মূল কপি দিতে হবে।
৪. আপনার আবেদনটি স্থানীয় ব্যাংকে যাবে এবং ঋণ পরিশুদ্ধ সক্ষমতা প্রদান করা হবে।
৫. আবেদনকৃত বিষয়াদি সবকিছু ঠিক থাকলে প্রধানমন্ত্রী লোন বাংলাদেশে থেকে ঋন প্রদান করা হবে।

শেষ কথা

আশা করি আপনারা উদ্যোক্তা লোন কিভাবে পাবেন তার পরিপূর্ণ ধারনা আজ পেলেন। আপনাদের এই বিষয়ে প্রাথমিক ও স্বচ্ছ ধারনা দেওয়ার উদ্দেশ্যই ছিলো আজকে আলোনার বিষয়। আশা করি সবাই উপকৃত হবেন এবং উক্ত আলোচনা থেকে ধরনা পোশন করে নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। আপনাদের সকলের সফলতা আমাদের কাম্য।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url