এসএমই লোন কি এবং কিভাবে পাবেন

ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্যই এসএমই লোন। এ ঋণ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া যায়। এই লোন ব্যবসার সম্প্রসারণে কাজে লাগবে। ঋণ পাওয়ার নিয়মটাও খুব সহজ। ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পঋণ বা এসএমই (স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম সাইজ এন্টারপ্রাইজেস) লোন প্রদান করা হয়।

যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী ১-২৫ জন, প্রতিষ্ঠান তাদের চিহ্নিত করে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করে এসএমই ঋণ দিয়ে থাকে। পক্ষান্তরে কর্মী ২৫ জনের বেশি হলে সেটি মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধরে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঋণের আওতায় পঁচিশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রদান করা হয়। মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ লক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত এসএমই লোন দিয়ে থাকে।

আলোচ্য বিষয়ঃ 

এসএমই লোন কি

এসএমই অর্থাৎ স্মল মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ। সংক্ষেপে ক্ষদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগে যে লোন দেওয়া হয় সেটিই মূলত এসএমই লোন। এই ঋণ বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক এর বেটার বিজনেস ফোরাম সংঙ্গা হিসেবে চালু করে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের ঋণের বিবরণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

স্মল এন্টারপ্রাইজ ব্যখ্যা:
স্মল এন্টারপ্রাইজ বলতে কোন কোম্পানি (পাবলিক লিমিটেড)-কে বুঝায় না। খাত, জমিজমা, দালান ব্যাতিত স্থায়ী সম্পদের পরিমান ও জনবলকে বুঝায় স্মল এন্টারপ্রাইজ। এই খাতের পরিসংখ্যান নিন্মরূপ-
১. সেবা খাত : ৫০ হাজার থেকে ৫০ লক্ষ টাকা- জনবল ২৫ জন
২. ব্যবসা খাত : ৫০ হাজার থেকে ৫০ লক্ষ টাকা- জনবল ২৫ জন
৩. শিল্প খাত : ৫০ হাজার থেকে দেড় কোটি টাকা- জনবল ৫০ জন

মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ ব্যখ্যা:
মাঝারি এন্টারপ্রাইজ বলতে কোন কোম্পানি (পাবলিক লিমিটেড)-কে বুঝায় না। খাত, জমিজমা, দালান ব্যাতিত স্থায়ী সম্পদের পরিমান ও জনবলকে বুঝায় স্মল এন্টারপ্রাইজ। এই খাতের পরিসংখ্যান নিন্মরূপ-
১. সেবা খাত : ৫ লক্ষ থেকে ১০ কোটি টাকা- জনবল ৫০ জন
১. ব্যবসা খাত : ৫ লক্ষ থেকে ১০ কোটি টাকা- জনবল ৫০ জন
৩. শিল্প খাত : দেড় কোটি থেকে বিশ কোটি টাকা- জনবল ১৫০ জন

প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজেই এসএমই ঋণের ক্ষেত্রে আর্থিক সংশ্লিষ্ট খাতে ঋণের হার নির্ধারণ করবে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক সমূহকে কিন্তু সুদের হার সহনশীলতা রাখতে নির্দেশ প্রদান করেছে। নারী উদ্যোক্তা পুনঃঅর্থায়ন স্কীমের আওতায় ও অটিস্টিক প্রতিবন্ধীকে, কটেজ, মাইক্রো ও ছোট খাতে উদ্যোক্তা উন্নয়ন পুনঃঅর্থায়ন স্কীমের আওতায় নতুন উদ্যোক্তাদের এবং মফস্বল ভিত্তিক কৃষিজাত শিল্প স্থাপনে, জ্ঞান ও সৃজনশীল লেখা প্রকাশ ও বিপণনের মাইক্রো ও ক্ষুদ্র এন্টারপ্রাইজকে ১০% (ব্যাংক রেট এর সাথে অতিরিক্ত ৫%) সুদহারে ঋণ প্রদান করে থাকে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজগুলোর বিকাশের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক “এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস্ বিভাগ” নামে একটি নতুন বিভাগ চালু করে ২০১০ সালে। এসএমই খাতকে শক্তিশালি করার লক্ষে মূলত এ খাত চালু করা হয়। বর্তমানে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ইউনিট সংযোগন করা হয়েছে। তাছাড়া নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তের বলে ঋনদানে ব্যাংকসমূহ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ প্রদান করা হয়।

আরো পড়ুনঃ  দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা গুলো কি জানুন

এসএমই ঋণ পাবেন কারা

সব বৈধ ব্যবসায়ীই পেতে পারেন এসএমই লোন। তবে ঋণ পাওয়ার জন্য অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের বয়স কমপক্ষে ২-৩ বছর হতে হবে। থাকতে হবে ব্যবসা সংক্রান্ত বৈধ ডকুমেন্ট এ ছাড়া ব্যবসায় উদ্যোগটি অর্থনৈতিক ও হিসাব-নিকাশের দিক থেকে হতে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থাৎ মেয়াদ শেষ অবধি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকেই ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য থাকতে হবে। ব্যবসার সঙ্গে ঋণগ্রহীতার সরাসরি সর্ম্পৃক্ততা থাকতে হবে। এর বাইরেও ব্যবসায়ী নিজের বা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে থাকতে হবে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। ঋণ পাওয়ার জন্য বয়সসীমা ২১-৬০ বছর হতে হবে।

এমনকি তারা সঞ্চয় হিসাবে Google Pay অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বিশ্বের অনেক দেশে গুগল পে অ্যাকাউন্ট খোলা থাকলেও কিছু দেশ আছে যেখানে গুগল পে সুবিধা উপভোগ করা যায় না। অর্থাৎ সে দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গুগল পে পরিষেবা।

এসএমই ঋণ আবেদনের নিয়ম

ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রথমেই আপনাকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে। প্রাথমিক আলোচনা করে নিতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে। কর্মকর্তারাগণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ধরন/বয়স/আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পরিশোধে সক্ষম কি না ইত্যাদি জানতে চাইবে। এরপর ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাবে। যাচাই করবে ব্যবসার পরিধি, ব্যবসায়িক ডকুমেন্ট এবং হিসাবের নিকাশের ফাইল। আপনি যে পরিমাণ ঋণের জন্য আবেদন করবেন, আদৌ সেটি আপনার প্রয়োজন কি না তা যাচাই করা হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে ঋণের জন্য নির্বাচিত করা হবে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে। ঋণদানের স্বচ্ছতার জন্যই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা হয় । ঋণ প্রদান সহায়তার পাশাপাশি পরিশোধের বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয়। ব্যাংক জামানতবিহীন ঋণ দেয় ১-২৫ লক্ষ টাকা। ৯ মাস থেকে শুরু করে ৫ বছর মেয়াদি লোনের আসল এমাউন্ট মাসিক কিস্তিতে বা চাইলে মেয়াদ শেষে এককালীনই পরিশোধ করতে পারবেন। কিন্তু সুদ পরিশোধ করতে হবে প্রত্যেক মাসেই। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণভেদে সুদের পরিমান ৯-১৮ শতাংশ হারে নির্ধারণ করে থাকে। জামানতসহ ঋণ দেওয়া হয় ২৫-৫০ কোটি টাকা । ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কোনো সম্পত্তির মূল দলিলের কপি সে ক্ষেত্রে জামানত রাখতে হয়। । ব্যবসার বয়স হতে হবে ১-৩ বছর ঋণ নেওয়ার জন্য ।

হতে পারে বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগ বা অন্য কোনো সমস্যার কারণে বাংলাদেশ থেকে উল্লিখিত অর্থ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আশা করি সরকার ভবিষ্যতে PayPal এবং Google Pay পরিষেবার মতো পরিষেবা প্রদানকারীদের পরিষেবাগুলি গ্রহণ করতে আমাদের সক্ষম করার জন্য পদক্ষেপ নেবে৷ যদিও এই পরিষেবাগুলি বাংলাদেশে পাওয়া যায় না, পেপ্যাল এবং গুগল পে পরিষেবাগুলি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাওয়া যায়।

ব্র্যাক ব্যাংক এসএমই নারী উদ্যোক্তা ঋণ

“তারা উদ্যোক্তা ঋণ এসএমই ঋণ” প্রকল্প অনুসারে উচ্চবিলাসী মহিলাদের ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাংক সেবার আওতায় ব্যবসা সম্প্রসারণ, সম্পত্তি ক্রয়, চলতি মূলধন, বাণিজ্যিক যান ক্রয়, আমদানি ও রাপ্তানি সহ বিভিন্ন খাতে মহিলাদের এসএমই নারী উদ্যোক্তা ঋণ প্রদান করে থাকে। সাধারণত মহিলারা এই ঋণ থেকে যেমন ঋণ নিয়ে মুনাফা অর্জন ও নিজেকে সাবলম্বি হিসেবে গড়ে তুলে একই সাথে দেশের ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সুচক উপরে উঠতে থাকে। এই ঋণের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে। নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. এই স্কিমের আওতায় ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃক একজন মহিলা ৪ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে তাদের চাহিদার ভিত্তিতে যে কোন এমাউন্ট লোন নিতে সক্ষম হন।
২. ৫০ লক্ষ টাকার ঋণের ক্ষেত্রে সুদের পরিমান শতকরা ৫%।
৩. এর আওতায় সর্বোচ্চ ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন লোন সুবিধা পাবেন।
৪. গ্রাহক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে পুরো দেশব্যাপী ব্র্যাক ব্যাংক এর শাখাগুলোতে এসএমই হেল্প ডেস্ক চালু রয়েছে।
৫. ভিন্ন ভিন্ন লাইফস্টাইল, রেস্টুরেন্ট এবং স্বাস্থ্য সেবা খাতে বিশেষ ছাড়।
৬. গ্রহকের জন্য সাজানো বিশেষ নেওয়ার্ক ও সক্ষমতা উন্নয়ন ভিত্তিক বিভিন্ন অনুদান।

এই ঋণ পাওয়া যোগ্যতাসমূহ হলো: বৈধ ট্রেড লাইসেন্স সহ ব্যবসা প্রতিস্ঠান এবং এর মেয়াদ সর্বনিম্ন এক বছর হতে হবে। ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে পারবেন এর জন্য যথেষ্ট ক্যাশ এবং মুনাফা অর্জন করা যায় এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে হবে এবং ব্যবসা একক মালিকানাধিন হতে হবে ও প্রাইভেট কোম্পানির ক্ষেত্রে ৫১% শেয়ার হোল্ডার হতে হবে।

এসএমই লোনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

এসএমই লোন দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। অধিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে, বিনিয়োগ বহুমুখীকরণে, নতুন নতুন বিনিয়োগ খাত তৈরি, অর্থনৈতিক উন্নতিকল্পে, ব্যাংক খাতের ঝুকি কমাতে, অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বাঁচতে, নিত্য নতুন টেকনোলজী উদ্ভাবনে, বিশাল উদ্যোক্তা তৈরিতে, দেশিয় প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ও দারিদ্র বিমোচনে এসএমই ঋণ ব্যবস্থা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

উপসংহার

এসএমই লোন বর্তমানে আমাদের দেশে ব্যপকভাবে প্রচলিত। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে। আশা করি আমার আজকের আলোনায় পুরো বিষয়টি আপনাদের বোধগম্য করতে সাহায্য করবে। ক্ষুদ্র অথবা মাঝারি যে কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে এসএমই লোন ব্যবস্থার ব্যবহার আমি করি জরুরী। আপদের ব্যবসা অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি আমরা। আশা করি আপনারা এর থেকে কিছু জনতে সক্ষম হবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url