অনলাইন মোবাইল লোন বাংলাদেশ
অনলাইন মোবাইল লোন সম্পর্কে আপনারা অনেকেই অবগত আছেন। কিন্তু জানেন না যে কিভাবে এই পাওয়া যায়। আজকের আমাদের এই আলোচনা মূলত কিভাবে সঠিক পন্থায় আপনি অনলাইন মোবাইল লোন এপ্লাই করবেন। এই লোন স্বল্প সময়েই এবং কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়া খুব সহজেই পাওয়া যায়। আসুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
আলোচ্য বিষয়ঃ
ভূমিকা
অনেকেই যারা ব্যবসা করেন তাদের হঠাৎ কোন বিষয়ে লোনের ইন্সট্যান্ট প্রয়োজন পড়ে। ব্যাংক বা এনজিও থেকে লোন নিতে হলে অনেক প্রসেসের মধ্য দিয়ে আপনাকে যেতে হয়। বিভিন্ন কাগজপত্রের অভাবে ব্যাংক বা এনজিও লোন পেতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু মোবাইল ডিভাই ব্যবহার করে খুব সহজেই পেতে পারেন এই লোন। প্রথমেই এই লোন নিতে কিছু ধাপের বর্ণণা দেওয়া হলো-
১. সর্বপ্রথম আপনাকে যা করা লাগবে সেটি হলো ‘ইন্সট্যান্ট লোন’ অ্যাপ ডাউনলোড। তারপর সেখানে রেজিস্ট্রেশন করে করা লাগবে। এখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
২. তারপর আপনার লোনের এ্যামাউন্ট নিশ্চিত করুন।
৩. তাদের সার্ভার থেকে যাতে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য আপনার মোবাইল নাম্বার ও সঠিক ইমেইল নাম্বার প্রদান করুন।
৪. আপনার আয় সংক্রান্ত কোন নথিপত্র প্রয়োজন হবে যেমন চাকুরি থাকলে বেতনের মেমো অথবা ব্যাংক স্টেটমেন্ট কিংবা ব্যবসার ক্ষেত্রে টিন নাম্বার প্রয়োজন হতে পারে।
৫. সব তথ্য ঠিক রেখে রেজিস্ট্রেশন করার পর আপনার এ্যাপ্লিকেশনটি তদারকির জন্য কিছু সময় নিবে তারপর আপনার সাথে যোগাযোগ করা হবে।
অনলাইন লোন নিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
কম্পোলসারি কিছু ডকুমেন্ট আপলোড দিতে হয়। অনলাইন মোবাইল লোন নিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি লাগবে তা নিম্নরূপ-
১. ভেরিফাইড মোবাইল নাম্বার
২. এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র)
৩. আয়কর স্লিপ
৪. টিন নাম্বার
৫. নাগরিক সনদ
৬. চাকুরি থাকলে তার প্রমাণপত্র
৭. ব্যবসা থাকলে তার প্রমাণপত্র
অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং
মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহকদের জন্য থাকছে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা লোন। সুবিধাবঞ্চিত জনসমষ্টির প্রয়োজনে এই একটি স্কিম গঠন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক। এই স্কিমটি হলো “ডিজিটাল ক্ষুদ্র ঋণ”। এর আওতায় বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ ১৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে। এই স্কিমের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রথম ধাপের জন্য পরিক্ষামূলক ৫০ কোটি টাকা পরে সফলভাবে এই স্কিম পরিচালিত হলে আরও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। সুদের হার নির্ণয় করা হয় শতকরা ৯%। সম্পূর্ণ প্রসেসটি হয়ে থাকে ডিজিটাল প্রকৃয়ায় অর্থাৎ অনলাইনে। তফসিল ব্যাংক কর্তৃক ইন্টারনেটে “ডিজিটাল ক্ষুদ্র ঋণ” প্রকল্প, মোবাইল এ্যাপ, ই-ওয়ালেট, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে থাকে। ১৯৯১ এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী ব্যাংক কোম্পানি আইন “ডিজিটাল ক্ষুদ্র ঋণ” তহবিল গঠনের মাধ্যমে এই স্কিম চালু করেছে যা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় একটি স্কিম।
ঢাকা ব্যাংক অনলাইন মোবাইল লোন
ঢাকা ব্যাংক কর্তৃক অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে সহজেই লোন এ্যাপ্লাই করতে পারেন। eRin অ্যাপের মাধ্যমে প্রয়োজনিয় কাগজপত্রের মাধ্যমে ঝামেলামুক্ত এই লোন পেতে পারেন। ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা লোন দিয়ে দিয়ে থাকে ঢাকা ব্যাংক অনলাইন মোবাইল লোন। লোন পরিশোধের মেয়াদ ৩-৬ মাস যা সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। ঢাকা ব্যাংক অনলাইন মোবাইল লোন এর বাৎসরিক ইন্টারেন্ট রেট শতকরা ৯% হয়ে থাকে।
eRin অ্যাপে যারা আবেদন করতে পারবেন
বাংলাদেশ অবস্থানকারি সকল নাগরিকই আবেদন করতে পারবেন এই অ্যাপে। বয়স সীমা হতে হবে সর্বনিম্ন ২১। নূন্যতম আয় থাকতে হবে মাসে ১০ হাজার টাকার বেশি। মোটামুটি এই কটি সহজ শর্তে আপনি eRin অ্যাপ হতে আবেদনের মাধ্যমে সহজে লোন পেতে পারেন।
eRin অ্যাপে আবেদন করতে কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন
১. আবেদনকারির জাতীয় পরিচয়পত্র
২. আয়ের প্রমানপত্র
৩. ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে নাগরিক সনদ
৪. আবেদনকারির সামাজিক কোন যোগাযোগ মাধ্যমে অর্থাৎ ফেসবুক/গুগল একাউন্ট থাকা লাগবে।
৫. সর্বপরি ঢাকা ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলি ঠিকঠাক থাকলে অফিস চলাকলিন বৃহস্পতিবার হতে রবিবারের মধ্যে এই আবেদন করা লাগে এবং আপনার আবেদনটি ঠিকঠাক থাকলে মাত্র ২ ঘন্টার মধ্যে তারা আপনাকে রেসপন্স করবে এবং লোন অনুমোদ দিবে।
ব্র্যাক ব্যাংক অনলাইন লোন
ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃক আপনি ঘরে বসে ‘সুবিধা’ অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই পাবেন এই লোন। এই অ্যাপ ডাউনলোড করতে আপনার মোবাইল ডিভাইস থেকে প্লে-স্টোরে সার্চ করুন BBL Shubidha। এই অ্যাপটি ডাউনলোড এবং ইন্সটল করে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করুন। তারপর ধাপে ধাপে যে সকল ডকুমেন্ট চাইবে সেগুলো আপলোড দিয়ে লোন এপ্লাই করুন।
সুবিধা অ্যাপে লোনের জন্য ধাপসমূহ
১. ভেরিফিকেশনের জন্য আপনার ছবি
২. ঠিকানা ভেরিফিকেশন করতে হবে
৩. জাতীয় পরিচয়পত্র
৪. অবশ্যই ব্র্যাক ব্যাংকে একাউন্ট থাকতে হবে।
সম্পূর্ণ ধাপ ঠিকঠাক থাকলে ব্যাংক কর্মদিবসের মধ্যে আবেদন করলে আপনি ৩০ দিনের মধ্যে লোন পাবেন। ব্যাংক ইন্টারেস্ট দিতে হবে শতকরা ৯%।
বিকাশ হতে কিভাবে লোন পাবেন
বর্তমানে আমাদের মোটামুটি সবাই বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করি। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে কিভাবে বিকাশ হতে লোন পাওয়া যায়। বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজে আপনি এই লোন পেতে পারেন। এক্ষেত্রে বিকাশের সাথে সিটি ব্যাংকের যৌথ ভূমিকা রয়েছে। ৫০০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন এই লোনের মাধ্যমে। লোন পরিশোধের সময়সীমা ৩ মাস এবং বাৎসরিক ইন্টারেন্ট রেট শতকার ৯%। আবেদনের নিয়মটিও খুবই সোজা। কত টাকা আপনি লোন নিবেন সেটি নির্বাচন করে এ্যাপ্লাই করলেই পেতে পারেন এই লোন। বিকাশ হতে লোনে বৈশিষ্ট হলো, আপনি খুব সহজেই কোন কাগজপত্র জমা না দিয়ে পেতে পারেন এই লোন। কোন প্রকার ব্যাংকে একাউন্টের প্রয়োজন হয় না। কোন জামানত লাগেনা এবং বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে অটোমেটিক কিস্তি প্রদান সুবিধা থাকে। লোনের উপর ব্যাংক প্রসেসিং ফি ০.৫৭৫% (০.৫% ভ্যাট)।
প্রশ্ন : আমার একাউন্ট থেকে লোন নিতে পারছিনা কেন?
উত্তর : কারণ বিকাশ সবাইকে লোন সুবিধা দেয় না। আপনার বিকাশ একাউন্টটি ভালোবাবে KYC (know your customer) পলিসি ভালোভাবে পূরণ করা থাকতে হবে। তাহলেই আপনি লোনের জন্য এ্যাপ্লাই করতে পারবেন।
প্রশ্ন : তিন মাসের কিস্তিতে লোন নিয়ে আমি প্রতি মাসে না দিয়ে শেষ তারিখে কি একবারে লোনের টাকা পরিশোধ করতে পারবো?
উত্তর : না। এভাবে বিকাশ পলিশির আওতায় ঋণ পরিশোধ প্রক্রিয়া সচল নাই।
প্রশ্ন : সর্বনিম্ন কত টাকা ট্রানজেকশন করলে লোন পাওয়া যাবে?
উত্তর : নির্দিষ্ট কোন পরিমান নাই।
প্রশ্ন : বিকাশের কোন একাউন্ট থেকে বেশি লোন সুবিধা পেয়ে থাকে?
উত্তর : বিকাশ এজেন্ট পয়েন্টগুলো পারসোনাল ইউজারের থেকে বেশি এই সুবিধা পেয়ে থাকে।
মূল কথা
বর্তমানে আমরা প্রায় সবক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা পেয়ে থাকি। ডিজিটাল সেবার উন্নয়নের ফলে আমরা সবাই ঘরে বসে থেকে সহজভাবে লোন পাওয়ার যে মাধ্যম, তার মোটামুটি ধারনা আশা করি আপনাদের দিতে পেরেছি। ডিজিটাল ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টিকারি একটি আর্থিক অনুদান কর্মসূচী। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সবাই এই সুবিধা পেতে পারি সহজেই। তার বিস্তারিত বর্ণণা দেওয়া চেষ্টা করেছি। সকলের অবগতির জন্য আমরা এভাবে বিভিন্নপ্রকার টিপস্ দিয়ে থাকি । আপনাদের সকলকে শুভকামনা জানিয়ে শেষ করছি আজকের আর্টিকেল। ধন্যবাদ।