মহাবিশ্ব ও আল-কুরআন

মহাবিশ্বের মহা বিষ্ময় আল কুরআন, যা পুরো মানব জাতির হিদায়াত ও সাফায়াতের গ্রন্থ। আমরা সবাই জানি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওপর জিবরাইল (আঃ) ফেরেস্তার মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহ্ তায়ালা কর্তৃক আল কুরআন নাযিল হয়। আল কুরআন একবারে নাযিল হয় কদরের রাতে এবং সংরক্ষিত হয় লওহে মাহফুজে। পরে আস্তে আস্তে দীর্ঘ ২৩ বছর যাবৎ বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে আল কুরআন নাযিল হয়।

আল কুরআন ১৪৫০ বছর পূর্বে নাযিল হলেও তা যে কতটা আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক তা বলার উদ্দেশ্যে আজকের আমাদের আলোচনা। ইনশাআল্লাহ্ পুরো পোস্টটি গুরুত্ব সহকারে পড়লে অনেকই বুঝতে পারবেন আল কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞানে সাদৃশ্য। আজকের লেখাটি পড়ে যারা মুসলিম ভাই-বোন আছেন তাদের ইমানের বৃদ্ধির পাশাপাশি নাস্তিকমনা মানুষের অনেক কথার উত্তর দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ্। চলুন শুরু করা যাক-

আলোচ্য বিষয়ঃ 

বিগ ব্যাং থিউরি ও আল-কুরআন

প্রথমেই শুরু করি আমাদের মহাবিশ্বের সূচনা দিয়ে। যারা অমুসলিম অথবা নাস্তিক আছে তাদের যদি বলা হয় যে কুরআনে অমুক জিনিস আছে বা কুরআনে এই জিনিসের কথা বলা হয়েছে, তারা কিন্তু সেটি গ্রহণ করবে না। এটিই বাস্তবতা। কিন্তু তাদের যদি বলা হয় যে বিজ্ঞান এই কথা বলেছে, তারা তাৎক্ষণিক সেটি বিশ্বাস করবে। তাই আগের বিজ্ঞানে কি বলা আছে মহাবিশ্বের সূচনা নিয়ে সেটিই তুলে ধরি।

মহাবিশ্বের সূচনায় বিগ ব্যাং থিউরি

আমরা সকলেই জানি বিগ ব্যাং এর অর্থ হলো মহাবিস্ফোরণ। আমাদের পৃথিবী, গ্রহ, নক্ষত্র সহ মহাবিশ্বের সবকিছু একসময় একটি বিন্দু ছিলো অর্থাৎ একত্রে ছিলো। পরে বিকট একটি শব্দের মাধ্যমে বিষ্ফোরণ ঘটে যার ফলে সৃষ্টি হয় মহাবিশ্বের। এবং এই থিউরি অনুযায়ি আরও বলা হয় যে সেই বিস্ফোরণ এর পর থেকে আমাদের মহাবিশ্ব আজও সম্প্রসারিত হচ্ছে। সর্বপ্রথম এই থিউরির ধারনা দেন বিজ্ঞানি এডুইন হাবল।

আমি উক্ত আয়াতের রেফারেন্স দিয়েছি। আপনারা চাইলে মিলিয়ে দেখে নিতে পারেন। উক্ত আয়াতের সাথে বিগ ব্যাং থিউরির সাদৃশ্য কোনভাবে এড়ানো যাবে না। ১৪০০ বছরের আগে মরুময় আরবে একটি কিতাবে এই জ্ঞানগর্ভ তথ্য কে দিতে পারে। নিশ্চয় এর পরিচলক অথবা সৃস্টিকারি কেউ আছেন। তিনি ছাড়া এই আয়াত বর্ণণা কে দিতে পারেন?

ছায়াপথ সৃষ্টির পূর্বে ছিল আদি গ্যাসীয় পিন্ড

বিজ্ঞানিরা বলেন, ছায়াপথ গঠনের পূর্বে মহাকাশীয় বস্তু ছিলো একটি গ্যসীয় পদার্থের ন্যায় অথবা বলতে পারেন ছায়াপথ সৃষ্টির পূর্বে সেটি মেঘমালা ও গ্যাসীয় পদার্থ দারা ঢাকা ছিলো।

এবার দেখুন আল-কুরআন কি বলে-
“অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন যা ছিলো ধুম্রকুঞ্জ বিশেষ। তিনি এক এবং পৃথিবীকে বললেন: এসো তোমরা একসঙ্গে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, তারা বলল: আমরা এলাম স্বেচ্ছায় অনুগত হয়ে।” (আল-কুরআন-৪১ : ১১)

পৃথিবীর আকার গোল
পূর্বে ধারনা করা হতো পৃথিবীর আকার চেপ্টা। পুর্বের এই ধারনা অনুযায়ী মানুষ দুরে ভ্রমণে ভয় পেত এই ভেবে যে, তারা পৃথিবীর কিনারায় গেলে পড়ে যাবে। ১৫৯৭ খৃস্টাব্দে স্যার ফ্রাসসিস ড্রেক সর্বপ্রথম পৃথিবীর চারপাশ জলপথে ভ্রমণের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন ও পৃথিবী চ্যাপ্টা নয় বরং এটি গোলাকার।
আল-কুরআনে বলা আছে: “তোমরা কি দেখনি, আল্লাহ্ রাতকে দিনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তিঁনি দিনকে অন্তর্ভুক্ত করেন রাতের মধ্যে?” (আল-কুরআন-৩১ : ২৯)। এই আয়াতের অর্থ হলো রাতের ধীরে ধীরে ক্রমান্নয়ে দিনে রুপান্তর তখনই সম্ভব যখন পৃথিবীর আকার হবে গোল। অপর আয়াতে বলা আছে- “তিনি যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী, তিঁনি রাত দারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং দিন দারা রাতকে আচ্চাদিত করে।” (আল-কুরআন-৩৯ : ৫) এখানে আরবী শব্দ ‘কুওবেরু’ এর অর্থ হলো আচ্ছাদিত করা, জড়ানো বা কুন্ডলী করা, যেভাবে মাথার চারদিকে পাক দিয়ে পাগড়ি বাঁধা হয়। দিন ও রাতের এই বিষয়টি বা জড়ানো তখনই সংঘটিত হবে যখন পৃথিবীর আকার হবে গোল। এবার দেখুন গোলের আকার সম্পর্কে কুরআন কি বলে- “আর এরপর তিনি পৃথিবীকে করেছেন ডিম্বাকৃতি।” (আল-কুরআন-৭৯ : ৩০) এই আয়াতে ‘দাহাহা’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে যার অর্থ উট পাখির ডিম। পৃথিবীর আকারের সাথে যার সাদৃশ্যি হুবহু একই।

চাঁদের আলো প্রতিফলিত আলো সম্পর্কে

পূর্বে বিশ্বাস করা হতো চাঁদের আলো তার নিজের আলো কিন্তু বিজ্ঞানের সম্প্রসারণের ফলে আজ আমরা জানতে পেরেছি চাঁদের আলো তার নিজের আলো নয়।
এবার দেখুন আল-কুরআন কি বলে: “কত মহান তিঁনি যিনি নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রাশিচক্র আর তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ ও জ্যোতির্ময় চন্দ্র।” (আল-কুরআন-২৫ : ৬১)
কুরআনে সূর্য এর জন্য আরবীতে ‘শামস’ আবার সুর্যকে বলা হয়েছে ‘সিরাজ’ যার অর্থ হলো ‘মশাল’ অথবা ‘ওয়াহাজা’ যার অর্থ ‘প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ’ হিসেবে যার অর্থ ‘তেজস্কর’। এই তিনটি বর্ণনাই সূর্যর ক্ষেত্রে মানানসই, কারন এটা প্রখর তাপ ও আলো উৎপন্ন করে। আর চাঁদের জন্য ‘কামার’ যা কুরআনে ‘মুনীর’ শব্দ ব্যবহার হয়েছে। ‘মুনীর’ হলো ‘নূর’ বা আলো দেয়। কুরআনের এই বর্ণনা চাঁদের বৈশিষ্টের সাথে হুবহু মিলে যায়। অপর আয়াতে বলা হয় “তিঁনিই সেই সত্তা যিনি সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে স্নিগ্ধ জ্যোতির্ময় করেছেন।” (আল-কুরআন-১০ : ৫)

সূর্যর ঘুরণ প্রক্রিয়া

পূর্বে ইউরোপিয় বিজ্ঞানিরা বিশ্বাস করতেন মহাবিশ্বের কেন্দ্রে পৃথিবী স্থির এবং সূর্যসহ সকল বস্তু এর চারিদিকে ঘর্ণায়মান। নিকোলাস কোপারনিকাস ১৫১২ খৃস্টাব্দে গ্রহের গতি প্রকৃয়া সম্পর্কিত সূর্য কেন্দ্রিক তত্ত প্রদান করেছিলেন। উনার মতে, সৌরজগতের কেন্দ্রে সূর্য গতিহীন অবস্থায় আছে। পরে ১৬০৯ খৃস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী ইউহান্নাস কেপলার ‘এসট্রোনোমিয়া নোভা’ একটি থিউরি বলেন। তার মতে, সূর্য এর চারপাশে গ্রহগুলো বৃত্তাকার কক্ষপথে শুধু ঘুরছেই না বরং তারা তাদের নিজেদের অক্ষের চারপাশেও ঘুরছে।
আল-কুরআন বলে: “আর তিঁনিই সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র; সকল (মহাকাশীয় বস্তুই) নিজ নিজ কক্ষপথে সাতার কাটছে।” (আল-কুরআন-২১ : ৩৩) এই আয়াতে ইয়াসবাহুন ব্যবহার হয়েছে তা ‘সাবাহা’ শ্বদ হতে উদ্ভুত যা গতিশীল বস্তুর গতির ধরন বুঝায়।

পর্বতসমূহ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত

আমাদের পৃথিবীর উপরভাগ অনেক শক্ত স্তর যা মজবুত প্লেট বা পাতে বিভক্ত। এই পাত আংশিক গলিত এলাকায় ভাসমান অবস্থায় থাকে। এই স্থানগুলোকে এসথেনোস্ফিয়ার বলে। আমাদের পৃথিবীর তক ৫ কিলোমিটার মোটা যা সাগরের নিচে, আর প্রায় ৩৫ কিলোমিটার মোটা সমতলে এবং ৮০ কিলোমিটার মোটা পর্বতসমূহের নিচে। এই হচ্ছে পৃথিবী ও পাহাড়ের মজবুত ভিত্তিস্তর।
কুরআন আমাদের জানায় যে: “আর তিনি পর্বতগুলোকে সুদৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছেন।” (আল-কুরআন সুরা নং-৭৯, আয়াত-৩২)

সমুদ্রবিদ্যা সম্পর্কে আল-কুরআন

সুপেয় মিষ্টি পানি ও লবনাক্ত পানি, খর পানির মধ্যে পর্দা বা অন্তরাল সৃষ্টি সম্পর্কে আল-কুরআন বলে: “তিনি দুটি সমুদ্রকে করেছেন বহমান, যা একে অপরের সাথে মিলিত কিন্তু তাদের মধ্যে রয়েছে এক পর্দা বা অন্তরাল যা তারা একে অপরকে অতিক্রম করতে পারে না।” (আল-কুরআন, সুরা নং-৫৫, আয়াত-২০)

মূল কথা

কুরআন কোন বৈজ্ঞানিক কিতাব নয়। কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তাদের জন্য আল্লাহ্ বিভিন্ন নিদর্শণ বর্ণনা করে থাকেন উপমা হিসেবে। এগুলোই মূলত বিজ্ঞানের সাথে সাদৃশ্যমান। যারা বুঝে আল-কুরআন পাঠ করবে তাদের অন্তর এই বিশ্বাস দারা পূর্ণ হবে যে, নিশ্চয় এই মহাজগৎ কেউ না কেউ সৃষ্টি করেছেন। একা একাই এতসব সৃষ্টি হয়নি। আশা করি সকলের কাজে আসবে এই আর্টিকেল।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url