সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক ও সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো জানুন
আমরা সময়ের সাথে সাথে নিজেদেরকে স্মার্ট এবং ডিজিটাল করে তুলেছি। একইভাবে, আজকের স্মার্ট বিশ্বে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া দুস্কর। যদিও আমরা সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি, কিন্তু আমরা অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবগত বা আলোচনা করিনা। তাই আজকের বিষয়টি তুলে ধরবো আপনাদের জন্য, কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের উপকার এবং অপকার করে থাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।
আলোচ্য বিষয়ঃ
সোশ্যাল মিডিয়া
সোশ্যাল মিডিয়া গত কয়েক বছরে অবিশ্বাস্যভাবে এগিয়েছে। ২০০৬ থেকে এখন পর্যন্ত উন্নতির হার অনেক বেশি। বিশেষ করে ফেসবুক এবং ইউটিউব খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। গুগল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ভুয়া ও আসল ফেসবুক ব্যবহারকারী ১৬,৬৩,৬৮,২৪৯ জন- যা এশিয়ার ৪ শতাংশের বেশি। দিন দিন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া একটি সমাজের জন্য অনেক সুবিধা নিয়ে এসেছে। উন্নত দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশ, সবাই সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। অন্যদিকে সমাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। ইতিবাচক কিছু করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি ব্যবহার করা, যা একজন ব্যবহারকারীর হাতে। কিন্তু ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যবহারকারীর ওপর। এই নিবন্ধটি সামাজিক সিস্টেমের জন্য সামাজিক মিডিয়ার সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং এর নেতিবাচক দিক দিয়ে শুরু করা যাক. কারণ এর উপকারিতা অনেক। কারণ সবকিছুরই ইতিবাচক প্রভাব আছে, কিন্তু যদি না তা নেতিবাচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আরো পড়ুনঃ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা হালাল কিনা জানুন
সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো দিক
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রথম এবং প্রধান সুবিধা হল কানেক্টিভিটি। মানুষ যে কোন জায়গা থেকে যে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারে। কোন স্থান বা ধর্ম বাধা হতে পারে না। সোশ্যাল মিডিয়ার সৌন্দর্য হল যে আপনি আপনার চিন্তাভাবনা শিখতে বা শেয়ার করতে যে কারও সাথে সংযোগ করতে পারেন। ছাত্র এবং শিক্ষকদের জন্য সামাজিক মিডিয়ার অনেক সুবিধা রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে অভিজ্ঞ এবং পেশাদারদের কাছ থেকে শেখা খুব সহজ। আপনার সমস্যার বর্ণনা করুন এবং এই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাহায্য ও নির্দেশনা নিয়ে আমরা সমাধান খুজে পাই।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রধান সুবিধা হল আপনি সব সময় আপডেট থাকতে পারবেন। কখনও কখনও প্রিন্ট মিডিয়া এবং টিভি চ্যানেলগুলি পক্ষপাতমূলক আচরণ করে। তাই প্রকৃত তথ্য পেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।
আপনার ব্যবসা অফলাইন হোক বা অনলাইন, সোশ্যাল মিডিয়া আপনাকে আরও সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে৷ পুরো বিশ্ব আপনার জন্য উন্মুক্ত, তাই আপনি সবার কাছে প্রচার করতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়া আপনার ব্যবসাকে আরও লাভজনক এবং সাশ্রয়ী হতে সাহায্য করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমাজ গঠনে বিরাট ভূমিকা পালন করে। এনজিও, সামাজিক পরিষেবা, অনুদান ইত্যাদির মতো কার্যকলাপগুলি সোশ্যাল মিডিয়াতে জোরালোভাবে প্রচার করা যেতে পারে। এছাড়া এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দরিদ্রদের সহায়তা আদান-প্রদান করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। সোশ্যাল মিডিয়া সচেতনতা তৈরি করে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী চিন্তাধারা যোগ করে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সরকার ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো অপকর্মের খোঁজ রাখতে পারে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া যেমন একটি ব্যবসাকে নষ্ট করতে পারে, এটি একই সময়ে অন্য ব্যবসার বিক্রয়-এবং খ্যাতিও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেহেতু পৃথিবীতে অনেক ধর্ম এবং বিশ্বাস রয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের নিজেদের ধর্ম এবং মতাদর্শ সম্পর্কে যোগদান করতে এবং শিখতে সাহায্য করে। একইভাবে, কেউ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মতামত গোষ্ঠীতে যোগ দিতে এবং আলোচনায় অংশ নিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং A to Z এবং ফ্রিল্যান্সিং ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর দিক
একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বেশিরভাগ শিশু অতীতে সাইবার বুলিং-এর শিকার হয়েছে। যে কেউ একটি জাল অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে এবং ধরা না পড়ে যা খুশি করতে পারে। ইন্টারনেটে গুন্ডামি করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। হুমকি, ভয়ভীতি, গুজব- যা সমাজকে অস্থির করে তোলে।
ব্যক্তিগত তথ্য এবং গোপনীয়তা সহজেই হ্যাক করা যায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলে আর্থিক ক্ষতি এবং ব্যক্তিগত জীবনের দুর্দশা ঘটতে পারে। একইভাবে, কারও অ্যাকাউন্টের তথ্য প্রকাশের ফলে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। এগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রধান অসুবিধা।
আসক্তি হলো সোশ্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর দিক। সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি খুব খারাপ হতে পারে এবং ব্যক্তিগত জীবনে তার আকর্ষণ খুবই ক্ষতিকর হতে পারে। কিশোর-কিশোরীরা এর থেকে বিশেষভাবে ঝুকিরপূর্ণ। তারা খুব খারাপভাবে জড়িয়ে পড়ে এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা লক্ষ্য করা যায়, যা বেশিরভাগ সময়ই ঘটে থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অপকর্ম করা সহজ হয়ে পড়েছে। আজকাল নিরাপত্তা সংস্থার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে অ্যাক্সেস রয়েছে, যা গোপনীয়তা রক্ষার কাজকে অসম্ভব করে তুলেছে। আপনি যদি কখনও ভুলে যান বা অজান্তে আপনার অ্যাকাউন্টে কিছু আলোচনা করেন, তবে এটি নিরাপত্তা সংস্থার অফিসার দ্বারা দেখা যাবে, যা আপনি হয়তো কখনও খেয়ালও করবেন না।
সোশ্যাল মিডিয়া মিথ্যা গল্প তৈরি করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে সহজেই কারও সুনাম নষ্ট করতে ভূমিকা রাখে। একইভাবে যে কোনো ব্যবসা এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। অনেকেই এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাব দেন। একইভাবে, তারা একে অপরকে মিথ্যা অনুভূতি এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারিত করে। ফলসরূপ যুবক যুবতীরা উভয়েই বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার শিকার হয়ে থাকে।
সোশ্যাল মিডিয়ার অত্যধিক ব্যবহার স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। ব্যায়াম করা শরীরের জন্য ভালো এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বসে বেশি সময় ব্যয় করা আপনাকে অলস করে তোলে, যা আপনার দৈনন্দিন রুটিনে খারাপ প্রভাব ফেলে। যার ফলে আপনি বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ে থাকেন যা আপনি কখনও কল্পনাও করে থাকেন না। সোশ্যাল মিডিয়া শুধু যে ব্যবহার করার একটি মাধ্যম তা নয়, বরং ইন্টারনেটে শেয়ার করা হয় এমন পাগলামি ক্রিয়াকলাপগুলি আসলে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অনেক গেমও আছে যা অনেককে সুসাইড করতে বাধ্য করে।
সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার
সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে পরিবারের সদস্যরা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে এবং পারিবারিক বন্ধন দিন দিন দুর্বল হয়ে পয়ছে। কাছের মানুষগুলো দূরে সরে যাচ্ছে আর দূরের মানুষগুলো কাছে আসছে। পুরনো স্কুল-কলেজের বন্ধুরা আবার উষ্ণ হয়ে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘদিনের আস্থা ও নির্ভরতায় ফাটল দেখা দিচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি সন্দেহ পোষণ করে, কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ে নানা অনৈতিক কাজে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারে ভেঙ্গে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের সাজানো সংসার।
আরো পড়ুনঃ কন্টেন্ট মার্কেটিং কি এবং ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কন্টেন্ট রাইটিং এর প্রয়োজনীয়তা
মিডিয়ার নেতিবাচক প্রবাব মোকাবিলায় আমাদের করণীয়
সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার রোধ করা গেলে উপরোক্ত সমস্যার সমাধান হতে পারে। এর নেতিবাচক দিকগুলো এড়িয়ে যাওয়া এবং এর ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে পরিবারের প্রধান ও কর্তা ব্যক্তিদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া, সব ধরনের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। শিশুদের পর্যাপ্ত সময় দিন এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন। ভুল পথে গেলে শিশুকে বুঝিয়ে বলুন, প্রাপ্তবয়স্ক না হলে স্মার্ট ফোন ধরিয়ে দেবেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার না করে প্রয়োজনীয় ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সময় দিতে হবে। তবেই বাকী সংক্ষিপ্ত জীবন নির্মল আনন্দে অতিবাহিত করা সম্ভব হবে।
মূল কথা
ভালো খারাপের বিবেচনা করা হলে সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতার দিকটাই সবথেকে বেশি। কিন্তু অপকারিতা কম হলেও তার দিকগুলো খুবই ভয়ংকর। আশা করি আমাদের লেখা পোস্ট থেকে আপনারা এর ভালো মন্দ দিকগুলো বিবেচনা করবেন। সে অনুযায়ী নিজে নিজে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সচেতন হোন। কারন সচেতনতা নিজের মধ্যেই। নিজের ভালো আমরা নিজেরাই বুঝি। সকলেই সোশ্যাল মিডিয়ার উপযুক্ত ব্যবহার করে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবন গড়বো এই হোক আগামি দিনের প্রত্যয়।