গায়ের রং ফর্সা করার ঘরোয়া পাঁচ উপায়
গায়ের রং উজ্জ্বল হোক, এটাই প্রায় সবার প্রত্যাশা। অনেকেই একধাপ এগিয়ে। অন্য কথায়, তারা বাজার থেকে বিভিন্ন 'কালার লাইটেনিং' ক্রিম কিনে ব্যবহার করে। এটি সাময়িকভাবে ফর্সা হলেও ত্বকের ক্ষতি করে। তাই এক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায় গ্রহণ করায় উত্তম। কারণ ত্বকের ধরন বুঝে ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতির ভয় থাকে না। বিভিন্ন কারণে আমাদের ত্বকের উজ্জলতা নষ্ট হয়ে যায়।
স্বাভাবিকভাবেই, আমাদের প্রত্যেকের স্কিন আলাদা। তাই অনেকের ঘরের তৈরি প্রাকৃতিক উপাদান ত্বকের সাথে মানানসই, আবার এমন অনেক লোক আছে যারা তাদের ত্বকের সাথে মানানসই পণ্য বাজার থেকে পাওয়া কৃত্তিম উপকরণ ব্যবহার করে। আমি মনে করি স্থায়ী ফর্সা করার জন্য বাড়িতে তৈরি প্যাকগুলি সেই সমস্ত লোকদের জন্য উপযুক্ত যাদের ত্বক বাজার থেকে কেনা ফেস প্যাক বা ত্বকের যত্নের পণ্যগুলি একেবারেই মানানসই নয়। স্থায়ী ফেয়ারিংয়ের জন্য ঘরোয়া প্রতিকারের জন্য কিছু পণ্যের প্রয়োজন হয় যা সাধারণত আপনার বাড়িতে থাকে।
আপনার ব্যস্ত সময়সূচী থেকে কিছুটা সময় বের করে নিজের যত্ন নিন। ত্বক সুন্দর হবে, মন ভালো থাকবে। আসুন জেনে নেই গায়ের রং ফর্সা করার পাঁচটি ঘরোয়া উপায়-
আলোচ্য বিষয়ঃ
লেবুর ব্যবহার
লেবুর রয়েছে অনেক উপকারিতা। লেবুর পানি ত্বকের যত্নেও জাদুর মতো কাজ করে। লেবু পানির উপকারিতা বা গুনাগুন অনেক যা ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। কোলাজেন বাড়ায়: কোলাজেন ত্বককে শক্ত ও মসৃণ রাখে। এই কোলাজেন উৎপাদনে লেবুর রস খুবই কার্যকরী। ত্বক দীর্ঘক্ষণ টানটান রাখতে এবং বার্ধক্য রোধ করতে নিয়মিত লেবু জল পান করুন। আর্দ্রতা বাড়ায়: ত্বককে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে ত্বককে হাইড্রেটেড রাখা অপরিহার্য। নিয়মিত লেবু পানি পান করলে ত্বক আর্দ্র থাকে। এছাড়াও এটি ত্বককে নরম ও উজ্জ্বল করে।
একটি লেবু নিন। তারপর লেবু কেটে রস বের করে নিন। সেখান থেকে দুই চা চামচ লেবুর রস নিয়ে এক চা চামচ পানিতে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি আক্রান্ত ত্বকে লাগান। লেবুর রসের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। মিশ্রণটি ব্যবহার করার পর দশ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। মিশ্রণটি ব্যবহার করার আগে ঘাড়ে বা কানের পিছনে লাগিয়ে দেখুন এটি ত্বকের জন্য উপযুক্ত কিনা। কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত না হলে ব্যবহার করুন। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা ত্বকের সব ধরনের দাগ দূর করে। ফলে ত্বক পরিষ্কার হয় এবং ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে। যার কারণে ত্বক আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। লেবুর ব্লিচিং বৈশিষ্ট্য ত্বককে ভেতর থেকে হালকা করে। এছাড়াও, রোদে পোড়া দাগ সহজেই দূর হয়।
আরো পড়ুনঃ বাইনারি ট্রেডিং কি এবং বাংলাদেশে বৈধ কিনা
হলুদের ব্যবহার
হলুদ রান্নায় বহুল ব্যবহৃত মসলা। শুধু রান্নার স্বাদ বাড়াতে নয়, ত্বকের যত্নেও হলুদের কোনো মিল নেই। নজরকাড়া নিখুঁত ত্বক কে না চায়? এবার এই কাজটি হবে হলুদের ৫টি ফেসপ্যাক দিয়ে। আজ আমি আপনাদের এমন ৫টি প্যাকের কথা বলব যা ত্বককে করবে নিখুঁত, উজ্জ্বল ও মসৃণ। হলুদকে 'জীবনের সোনার মশলা' বলা হয়। হলুদের অ্যান্টি-সেপটিক, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণ দূর করে। এছাড়া এর প্রাকৃতিক উপাদান ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক হলুদের কিছু কার্যকরী ফেসপ্যাক।
ক) হলুদ, মধু এবং দুধের প্যাক :
১/৪ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো, এক চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি ত্বকে ব্যবহার করুন। প্যাক ব্যবহারের আগে ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তারপর ত্বকে হলুদের প্যাক ব্যবহার করুন। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। প্যাকটি শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহে একবার প্যাকটি ব্যবহার করুন। মধু ত্বককে হাইড্রেট করে এবং নরম ও কোমল করে তোলে। এর অ্যান্টি-সেপটিক এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী ত্বকের ব্যাকটেরিয়া দূর করে ব্রণের দাগ কমায়। দুধে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল এবং ভিটামিন রয়েছে যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে নরম রাখে। এটি ত্বকের বলিরেখা এবং মৃত কোষ দূর করতেও সাহায্য করে।
খ) হলুদ, অ্যাভোকাডো এবং টকদই :
১/৪ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো, এক টেবিল চামচ অ্যাভোকাডো পেস্ট এবং এক চা চামচ দই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি ত্বকে লাগান। দশ মিনিট পরে, ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অ্যাভোকাডোর ভিটামিন-ই, প্রাকৃতিক তেল এবং ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে হাইড্রেট করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
গ) হলুদ, লেবুর রস এবং মধু :
লেবুর রস কালো দাগ, ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকের ছিদ্র সঙ্কুচিত করে। মধু একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। শুধু তাই নয়, মধু ব্রণ হওয়ার প্রবণতা রোধ করে। ১/৪ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো, ১-২ চা চামচ লেবুর রস এবং ১ টেবিল চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন দশ মিনিট। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এই প্যাকটি ব্যবহার করুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
ঘ) হলুদ, বেসন এবং গোলাপ জলের প্যাক :
বেসন ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়, ত্বককে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত রাখে এবং ব্রণের প্রবণতা কমায়। বেসন প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েন্ট হিসেবেও কাজ করে। এক টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়া, দুই টেবিল চামচ বেসন, এক থেকে দুই টেবিল চামচ গোলাপ জল একসাথে মেশান। প্যাক ব্যবহারের আগে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। তারপর পেস্টটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ১০-১৫ মিনিট পর মুখ শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণ প্রবণ ত্বক কমায়।
ঙ) হলুদ, টকদই এবং টমেটো মাস্ক :
ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে এই প্যাকটি বেশ কার্যকরী। ১/৪ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ টক দই, ১ টেবিল চামচ টমেটো পিউরি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ১০-১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
এখানে কীভাবে পাঁচটি হলুদের ফেসপ্যাক কিভাবে তৈরি করবেন এবং ত্বকে লাগাবেন তার বিস্তারিত জনানোর চেষ্টা করেছি। আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটি প্যাক বেছে নিন এবং নিয়মিত আপনার ত্বকে প্রয়োগ করুন।
আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল মার্কেটিং A to Z এবং ফ্রিল্যান্সিং ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
দুধের ব্যবহার
ত্বকের যত্নে দুধ সব সময়ই সেরা। দুধ দিয়ে গোসল করলে ত্বক মশৃণ হয়। ত্বককে হাইড্রেটেড রাখা থেকে শুরু করে গ্লো বাড়ানো পর্যন্ত দুধ সাহায্য করে। মুখে দুধ কিভাবে রাখবেন? চলুন বলে দিই এই টিপস- কাঁচা দুধে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন ই, যা ত্বকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। দুধ ত্বককে বার্ধক্য থেকে রক্ষা করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং ত্বককে প্রাকৃতিক আভা দেয়। ত্বক উজ্জ্বল করতে দুধ দারুণ উপকারী। কাঁচা দুধে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে। এটি ত্বকে প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে এবং মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকের প্রদাহ কমাতে কাঁচা দুধের সাথে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে লাগান। ব্রণ ও দাগের সমস্যাও দূর করবে। এছাড়াও ত্বক অনেক উজ্জ্বল দেখাবে। কাঁচা দুধ শুষ্ক ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। কাঁচা দুধের সাথে মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই মিশ্রণ ত্বকে প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বক পরিষ্কার করতে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটির সঙ্গে দুধ মিশিয়ে মুখে লাগান। এটি আপনার ত্বকের গঠন উন্নত করবে। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে দুধ ব্যবহার করুন। দুধের সাথে চিনি ও বেসন মিশিয়ে নিন। ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। তারপর হালকা হাতে স্ক্রাব করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি আপনার ত্বককে করবে মসৃণ ও কোমল।
টমেটোর ব্যবহার
ত্বকের পরিচর্যায় টমেটো খুবই উপকারী। টমেটোর রস ত্বক মশৃণ রাখে। তৈলাক্ত তকের জন্য টমেটোর ব্যবহার উপকারী কারণ এর রস চিটচিটে ভাব কম করতে এবং ত্বক সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। টমেটো তকের আদ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। ত্বক শুস্ক রাখে। ফলে ফুটে উঠে প্রাকৃতিক উজ্জলতা। টমেটোর সাথে এলোভেরা মিশিয়ে ব্যবহার করলে এটি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। টমেটোতে থাকা এনজাইম ত্বকের মৃতকোষ ও ব্ল্যাক হেডস্ দুরিকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর জন্য টমেটোর সাথে লাল চিনি একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। মিশানোর ক্ষেত্রে চিনি ও টমেটোর ভেতরের অংশ ভালোবাবে ১৫ মিনিট একত্রে রেখে তারপর ব্যবহার করুন। যারা ঘন ঘন মেকাপ করে থাকেন তাদের ত্বকে জন্য টমেটো ব্যবহার করলে এতে থাকা ক্যারোটিন, লুটেইন এবং ভিটামিন সি ত্বকে প্রদাহ ও অস্বস্তি দুর করতে সাহায্য করে। ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে হলুদের গুড়ার সাথে চন্দন আর টমেটোর রস মিশিয়ে ব্যবহার করুন। তাছাড়া টমেটো রোদের কারনে হওয়া ত্বকের ক্ষয় কমাতে বিশেষ সাহায্য প্রদান করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ কন্টেন্ট মার্কেটিং কি এবং ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কন্টেন্ট রাইটিং এর প্রয়োজনীয়তা
দই ব্যবহার
যারা মেকআপে বেশি সময় দিতে চান না, কিন্তু সুস্থ ও সুন্দর ত্বক চান, তারা নিরাপদে টকদাইয়ের ওপর নির্ভর করতে পারেন। এটি রোদে পোড়া ত্বক দূর করে এবং ত্বকের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করে। শুধু তাই নয়, এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে। প্রতিদিন মুখে এবং ঘাড়ে টাকদি লাগান এবং কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর একটি ভেজা কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে আপনার মুখ এবং ঘাড় ভালোভাবে মুছে নিন। বাইরে যাওয়ার তাড়া থাকলে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে পারেন কারণ টকদি লাগানোর পর এর গন্ধ কিছু সময়ের জন্য মুখ থেকে চলে যাবে। তবে দ্রুত ফল পেতে চাইলে টক ক্রিম লাগানোর পর এক থেকে দেড় ঘণ্টা রোদে না যাওয়াই ভালো। যেহেতু শেপ করার এই পদ্ধতিটি খুবই সহজ, আপনি এটি শরীরের অন্যান্য উন্মুক্ত অংশ যেমন হাত, পা, ঘাড় এবং পিঠে ব্যবহার করতে পারেন।
শেষ কথা
আপনারা নিশ্চয় জানতে পারলেন কিভাবে ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহার করে রুপচর্যা করা যায়। বাজারের যে কোন উপাদান বা ক্রিম ত্বকের জন্য সাময়িক উজ্জলতা দিতে পারলেও এর ক্ষতির পরিমান বেশি। কিন্তু আপনি যদি প্রাকৃতিক ভাবে অর্থাৎ উপরে বর্ণিত ধাপগুলো ভালোবাবে অন্তত এর যে কোন একটিও যদি প্রতিদিন ধরে রাখতে পারেন তাহলে কোন এক্সট্রা উপকরণ বাজার থেকে কিনতে হবে না। তাছাড়া এসব প্রাকৃতিক উপায় হওয়াই কোন সাইড ইফেক্ট থাকে না। তাই নিশ্চিন্তে আমাদের দেওয়া পরামর্শ মেনে চললে লভবান হবেন।